অনলাইন ডেস্ক: জনবল নিয়োগে দুর্নীতি-অনিয়মসহ নানা কারণে আলোচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। উপাচার্য পদে অধ্যাপক সোবহান আছেন আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। আগামী বৃহস্পতিবারই শেষ হচ্ছে তাঁর উপাচার্যের মেয়াদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শেষ বেলায় এসে পছন্দের প্রার্থীদের অ্যাডহকে চাকরি দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন উপাচার্য। ক্যাম্পাসের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের অভিযোগ, এসব নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও জড়িত। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও উপাচার্য কেন নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠলেন, তা নিয়েই বিভিন্ন মহলে উঠেছে প্রশ্ন। দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের দাবি, শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই উপাচার্য অ্যাডহকে নিয়োগ দিতে চাইছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে কোনো ধরনের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, অধ্যাপক সোবহান ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। দায়িত্ব নেওয়ার বেশ কিছুদিন পর তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য দেওয়া, প্রশাসনিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি উল্লেখযোগ্য। এসব অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেন দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকরা। অভিযোগ তদন্তে নেমে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতাও পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখাসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে রাবি উপাচার্যকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নিষেধাজ্ঞার পরও শেষ মুহূর্তে সেকশন অফিসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে কমপক্ষে ১০০ জনকে গোপনে নিয়োগ দিতে উপাচার্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন অধ্যাপক সোবহান। নিয়মের বাইরে গিয়ে সে সময় ৩৩০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। এর মধ্যে অস্থায়ীভাবে ৯৫ জন এবং সাতজন এডহকে। এ ছাড়া ৩৪৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিয়োগ দেন উপাচার্য।
দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকরা জানান, প্রথম মেয়াদে উপাচার্য অধ্যাপক সোবহানের দেওয়া নিয়োগগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। ওই নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে এসেও তিনি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এডহক ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন।
এ ব্যাপারে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, কেন তাঁকে নিষেধাজ্ঞার পরও নিয়োগ দিতে হবে? তিনি কি কোনো কারণে দায়বদ্ধ? মূলত ব্যক্তিগত প্রত্যাশা পূরণ ও লাভবান হওয়ার জন্যই শেষ মুহূর্তেও উপাচার্য নিয়োগ দিতে তৎপর বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘মেয়াদের শেষ সময়ের সব অনৈতিক কাজ ও দুর্নীতিকে দাপ্তরিকভাবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন উপাচার্য। গত রবিবার তিনি নিজ বাসভবনে ফিন্যান্স কমিটির সভা ডেকেছিলেন। কিন্তু সেই সভা করতে পারেননি। এ ছাড়া আগামীকাল (মঙ্গলবার) সিন্ডিকেট সভা রয়েছে। হয়তো তিনি সিন্ডিকেট সভায় এডহক নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালাবেন। আমরা এসব বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে গত রবিবার সকালে ফিন্যান্স কমিটির মিটিং শুরুর আগে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবন, প্রশাসন ও সিনেট ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে ফিন্যান্স কমিটির সভা আর করতে পারেননি উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মেয়াদের শেষ সময়ে যেন তিনি অতীতের মতো আর দুর্নীতি করতে না পারেন, সে জন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি।’
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে কোনো ধরনের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা এ ব্যাপারে নিয়মিতই খোঁজখবর রাখছি। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া ইউজিসি কোনো পদের অনুমোদন না করলে সেই পদে নিয়োগ দিতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে নিয়োগই বন্ধ। সম্প্রতি নতুন কোনো পদে নিয়োগের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি।’
এসব ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। কালের কন্ঠ
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.